শিশুর ভাষা বিকাশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা তার মানসিক, সামাজিক এবং বুদ্ধিগত বিকাশের উপর প্রভাব ফেলে। জন্মের পর থেকে শিশু ধীরে ধীরে তার চারপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে শিখতে শুরু করে। প্রতিটি শিশু ভিন্ন এবং তার ভাষা বিকাশের সময়সীমাও ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিশুরা বিভিন্ন ভাষাগত মাইলফলক অর্জন করে। এই প্রক্রিয়ায় বাবা-মায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এখানে আমরা আলোচনা করব শিশুর ভাষা বিকাশের সাধারণ সময়সীমা, এর প্রভাবক বিষয় এবং ভাষা বিকাশে সহায়ক কিছু কার্যকলাপ।
১. ভাষা বিকাশের সাধারণ সময়সীমা
প্রতিটি শিশুর ভাষা বিকাশের যাত্রা শুরু হয় জন্মের পরপরই। যদিও প্রথমদিকে এটি খুবই সরল এবং বাচ্চার কান্না বা অন্য কোনো স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকে, তবে ধীরে ধীরে শিশুটি বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ভাষার জগতে প্রবেশ করে। এখানে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ভাষার মাইলফলকগুলো উল্লেখ করা হলো:
০-৩ মাস:
এই সময়ে শিশুরা কান্না ও বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয়তা এবং ইচ্ছাগুলো প্রকাশ করতে চেষ্টা করে। শিশুর কান্না বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের হতে পারে, এবং প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তারা তার আশেপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করে। যেমন, ক্ষুধা লাগলে এক ধরনের কান্না, আর কোনো অস্বস্তি হলে আরেক ধরনের কান্না করতে পারে।
৪-৬ মাস:
এই সময়ে শিশুর হাসি এবং বিভিন্ন ভোকালাইজেশন দেখা যায়। শিশুটি নতুন নতুন শব্দের পরীক্ষা করতে শুরু করে এবং বিশেষ করে স্বরবর্ণের শব্দ (যেমন, “আ”, “ই”, “উ”) উচ্চারণ করার চেষ্টা করে। কিচিরমিচির করা এবং বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে তারা তাদের আনন্দ বা অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করে।
৭-১২ মাস:
এটা এমন সময় যখন শিশুরা ধীরে ধীরে কথা বলার সঠিক ধাপের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। তারা “মা”, “বাবা” বা এ ধরনের সাধারণ শব্দগুলি বলতে চেষ্টা করে। তারা আশেপাশের শব্দের অনুকরণও করতে পারে এবং ভিন্ন শব্দ শুনে তা পুনরায় বলার চেষ্টা করে।
১২-১৮ মাস:
এই সময়ের মধ্যে শিশুরা সাধারণত ১০ থেকে ২০টি সাধারণ শব্দ শিখতে পারে। তারা বিভিন্ন বস্তুর সাথে শব্দের সংযোগ স্থাপন করতে পারে, যেমন, বলকে বল বলে ডাকা অথবা খেলার জিনিসগুলোকে সঠিক নাম দেওয়া।
১৮-২৪ মাস:
এই বয়সে শিশুরা সাধারণত ২-৩ শব্দের বাক্য গঠন করতে সক্ষম হয়, যেমন “আমার বল”, “মা এখানে”। তাদের শব্দভাণ্ডারও বৃদ্ধি পায় এবং তারা প্রায় ৫০ থেকে ১০০টি শব্দ জানতে পারে।
২৪-৩৬ মাস:
এ সময় শিশুরা আরও জটিল বাক্য গঠন করতে পারে এবং সাধারণ কথোপকথনে অংশগ্রহণ করতে পারে। ৩-৪ শব্দের বাক্য তৈরি করা এবং কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। তারা ধীরে ধীরে তাদের চারপাশের মানুষের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে শিখে।
২. শিশুর ভাষা বিকাশে প্রভাবক বিষয়সমূহ
প্রতিটি শিশুর ভাষা বিকাশ প্রভাবিত হয় বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক কারণে। এই কারণগুলো শিশুর ভাষা শেখার গতি এবং দক্ষতা নির্ধারণ করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক বিষয় হলো:
পারিবারিক ভাষা পরিবেশ:
একটি শিশুর ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রে তার পারিবারিক ভাষা পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি পরিবারের সদস্যরা শিশুর সাথে নিয়মিত কথা বলে, গান গায়, গল্প শোনায়, তবে শিশুটি তার ভাষাগত দক্ষতা দ্রুত বিকশিত করতে পারে। শিশুটি যে ভাষা উদাহরণগুলি দেখে এবং শুনে তার ভিত্তিতেই সে ভাষা শেখে।
বয়স অনুযায়ী ভাষার উদ্দীপনা:
শিশুর ভাষা বিকাশে উদ্দীপনার পরিমাণও বড় ভূমিকা পালন করে। পরিবারের সদস্যরা, বিশেষত বাবা-মা, যদি শিশুকে যথেষ্ট ভাষাগত উদ্দীপনা দেয় এবং তাকে শেখানোর জন্য নিয়মিত প্রচেষ্টা করে, তবে শিশুটি সহজেই কথা বলা শিখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিশুকে নতুন শব্দ শেখানো, খেলতে খেলতে কথা বলা এবং তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা ভাষা বিকাশে সহায়ক।
বংশগত প্রভাব:
অনেক সময় শিশুর ভাষা বিকাশে বংশগত প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। যদি পরিবারে ভাষার বিকাশে কোনো দেরি হয় বা বিশেষ চ্যালেঞ্জ থাকে, তবে শিশুটির ক্ষেত্রেও এ ধরনের সমস্যার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই বাবা-মায়ের পরিবারের ইতিহাস অনুযায়ী শিশুর ভাষা বিকাশের সময়সীমা হতে পারে।
শ্রবণ ক্ষমতা:
শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা তার ভাষা বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি শিশুর কোনো ধরনের শ্রবণজনিত সমস্যা থাকে, তবে তার ভাষা শেখার গতি ধীর হতে পারে। তাই, শিশুর ভাষা বিকাশে বিলম্ব দেখা দিলে তার শ্রবণ ক্ষমতা পরীক্ষা করা উচিত।
৩. ভাষা বিকাশে সহায়ক কার্যকলাপ
শিশুর ভাষা বিকাশের প্রক্রিয়ায় বাবা-মায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের সহজ কিছু কার্যকলাপ শিশুর ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। এখানে কিছু কার্যকরী পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
গল্প বলুন:
প্রতিদিন শিশুকে গল্প শোনানো তার ভাষার বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক। গল্পের মাধ্যমে শিশু নতুন শব্দ শিখে এবং বাক্য গঠন করতে শিখে। এছাড়া গল্প শোনানোর সময় শিশু বিভিন্ন কল্পনা তৈরি করে, যা তার সৃজনশীলতা এবং ভাষাগত দক্ষতা বাড়ায়।
গান গাওয়া ও কবিতা শোনানো:
শিশুর মনে শব্দ ও ছন্দের ধারণা তৈরি করতে গান এবং কবিতা খুবই সহায়ক। গান শোনানো বা গাওয়ার মাধ্যমে শিশুটি নতুন শব্দ শিখে এবং ছন্দের মাধ্যমে শব্দের সঠিক উচ্চারণ শিখতে পারে। এছাড়াও, গানের মাধ্যমে শিশুদের মন আনন্দিত হয় এবং তারা ভাষার সাথে ইতিবাচক সংযোগ স্থাপন করে।
পোস্টার বা ছবি দেখে শব্দ শেখানো:
শিশুকে পোস্টার বা ছবি দেখিয়ে নতুন শব্দ শেখানো একটি মজার এবং কার্যকরী পদ্ধতি। ছবি দেখে শব্দ শেখার মাধ্যমে শিশু বস্তুর সাথে শব্দের সংযোগ করতে শেখে। এই পদ্ধতি তাদের ভাষাগত দক্ষতা এবং দৃষ্টি ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক।
প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা:
শিশুকে বিভিন্ন খোলা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা তাদের চিন্তাশক্তি এবং ভাষা বিকাশে সহায়ক। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য শিশুটি নতুন শব্দ ব্যবহার করতে শেখে এবং তার চিন্তার সীমানা প্রসারিত হয়। যেমন, “এটা কী?”, “তুমি কী ভাবছো?” এ ধরনের প্রশ্ন শিশুদের চিন্তা এবং কথা বলার জন্য উদ্দীপিত করে।
৪. কথা বলা শেখানোর কৌশল
শিশুকে ভাষা শেখানোর প্রক্রিয়ায় বাবা-মায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সাথে নিয়মিতভাবে কথা বলা এবং তাকে ভাষার উদ্দীপনা দেওয়া তার ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এখানে কিছু কার্যকরী কৌশল উল্লেখ করা হলো যা শিশুকে কথা বলতে শেখাতে সাহায্য করবে:
নিয়মিত কথা বলা:
শিশুর সাথে প্রতিনিয়ত সহজ এবং সংক্ষিপ্ত বাক্যে কথা বলুন। এটি শিশুর জন্য ভাষা শেখার একটি চমৎকার উপায়। শিশুর চারপাশের মানুষ যদি তার সাথে বারবার কথা বলে, সে দ্রুত ভাষা শিখতে শুরু করে। যেমন, যখন আপনি তার সাথে খেলছেন বা খাওয়াচ্ছেন, তখন সহজ বাক্য ব্যবহার করে তাকে বিভিন্ন বস্তু বা ক্রিয়াকলাপের নাম জানান। এর মাধ্যমে শিশু নতুন শব্দ শিখবে এবং শব্দগুলির অর্থ বোঝার দক্ষতা অর্জন করবে।
শব্দের পুনরাবৃত্তি করা:
প্রতিদিনকার জিনিসপত্রের নাম বারবার উল্লেখ করা শিশুর ভাষা বিকাশে সহায়ক। শিশু যখন কোনো বস্তু দেখবে, আপনি তার নাম বারবার বলে দিন, যেমন “এটা বল”, “এটা গাড়ি”। এভাবে শব্দগুলির পুনরাবৃত্তি শিশুকে শব্দগুলির সাথে বস্তুর সংযোগ করতে শেখায়। পাশাপাশি, শিশুকে শেখানোর জন্য নিয়মিত বিভিন্ন জিনিসের নাম বলুন।
ইশারা ও শব্দ মিলিয়ে শেখানো:
শিশুর ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ইশারা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন আপনি কোনো বস্তু বা ক্রিয়াকলাপের নাম বলেন, তখন সেই বস্তুর দিকে ইশারা করুন বা ক্রিয়াটি দেখান। যেমন, যখন আপনি বলবেন “জল পান”, তখন পানির বোতল দেখিয়ে ইশারা করুন। ইশারা এবং শব্দের এই মিশ্রণ শিশুকে ভাষা দ্রুত শেখার সুযোগ দেয়।
ধৈর্য ধারণ করা:
শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন গতিতে ভাষা শেখে। তাই শিশুকে ভাষা শেখানোর সময় ধৈর্য ধরুন। কখনো কখনো শিশুরা কথা বলতে একটু সময় নেয়। তাকে সময় দিন এবং তার যেকোনো ছোট্ট প্রচেষ্টাকেও উৎসাহিত করুন। যখন সে কোনো শব্দ উচ্চারণ করবে বা কিছু বলার চেষ্টা করবে, তাকে প্রশংসা করুন। এই প্রশংসা তার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং সে আরও শিখতে আগ্রহী হবে।
৫. কোনো বিলম্বের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা
কিছু ক্ষেত্রে শিশুর ভাষা বিকাশে দেরি হতে পারে। এটি কখনো স্বাভাবিক হতে পারে, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই শিশুর ভাষা বিকাশের নির্দিষ্ট লক্ষণগুলো লক্ষ্য করা উচিত। এখানে কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো যেগুলি ভাষা বিকাশে বিলম্বের ইঙ্গিত দিতে পারে:
১২ মাসে একক শব্দ না বলা:
যদি ১২ মাস বয়সের মধ্যে শিশু কোনো একক শব্দ (যেমন “মা”, “বাবা”) উচ্চারণ না করে, তবে এটি ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রে বিলম্বের ইঙ্গিত হতে পারে। এ সময় সাধারণত শিশুরা কিছু সাধারণ শব্দ বলতে শুরু করে।
১৮ মাসে প্রতিক্রিয়া না জানানো:
১৮ মাস বয়সের মধ্যে শিশুরা সাধারণত তাদের নাম শুনলে বা কোনো সহজ নির্দেশ শুনলে সাড়া দেয়। যদি এ বয়সের মধ্যে শিশু কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তাহলে এটি ভাষাগত বিকাশের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সংকেত হতে পারে।
২৪ মাসে ২ শব্দের বাক্য না বলা:
এই বয়সে শিশুরা সাধারণত ২ শব্দের বাক্য তৈরি করতে সক্ষম হয়, যেমন “মা দাও” বা “বল আনো”। যদি ২৪ মাস বয়সেও শিশুটি এমন কোনো বাক্য তৈরি না করে, তবে এর অর্থ হতে পারে যে তার ভাষা বিকাশে দেরি হচ্ছে।
৩৬ মাসে বাক্য গঠন না করা:
৩৬ মাস বয়সের মধ্যে শিশুরা সহজ বাক্য গঠন করতে সক্ষম হয়। যদি এ বয়সের মধ্যে শিশু সাধারণ কথোপকথন করতে না পারে, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শ্রবণ বা যোগাযোগে সমস্যা:
যদি শিশুর কোনো ধরনের শ্রবণ সমস্যা বা যোগাযোগের সমস্যার লক্ষণ দেখা যায়, যেমন তার নাম ধরেও ডাকলে সে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেয়, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। শ্রবণজনিত কোনো সমস্যার কারণে ভাষা বিকাশে বিলম্ব হতে পারে।
৬. পরামর্শ ও সমাধান
যদি কোনো শিশুর ভাষা বিকাশে দেরি হয় বা বাবা-মা শিশুর ভাষাগত দক্ষতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, তবে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এখানে কিছু পরামর্শ ও সমাধান উল্লেখ করা হলো যা শিশুর ভাষা বিকাশকে সহায়ক করবে:
বাবা-মায়ের ভূমিকা:
শিশুর ভাষা বিকাশে বাবা-মায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা শিশুর সাথে নিয়মিত কথা বললে এবং শিক্ষামূলক কার্যকলাপে তাকে যুক্ত করলে শিশুর ভাষা শেখা দ্রুত হতে পারে। শিশুকে নতুন শব্দ শেখানোর জন্য শিক্ষণীয় খেলনা, শব্দের বই এবং অন্যান্য কার্যকলাপ কাজে লাগান। শিশুর সাথে বেশি সময় কাটান এবং তার প্রতিটি ভাষাগত প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করুন।
অধিক সময় গল্প ও বই পড়া:
গল্প এবং বই শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নের একটি চমৎকার মাধ্যম। বাবা-মা প্রতিদিন শিশুকে বই পড়ে শোনাতে পারেন। ছবির বই দেখে শিশুকে গল্প বলা এবং তাকে নতুন শব্দ শেখানো ভাষা শেখার প্রক্রিয়াকে গতিময় করে তোলে। বিশেষ করে ছবি ও শব্দ সমৃদ্ধ বই শিশুর মনে নতুন শব্দ শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তোলে।
শ্রবণ পরীক্ষা:
যদি শিশুর ভাষা বিকাশে দেরি হয়, তবে তার শ্রবণ ক্ষমতা পরীক্ষা করা উচিত। অনেক সময় শ্রবণজনিত সমস্যার কারণে শিশুরা ঠিকমতো কথা বলতে শেখে না। শ্রবণ পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাটি সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ:
যদি কোনো শিশুর ভাষা বিকাশে দীর্ঘ সময় লাগছে বা বাবা-মা এতে উদ্বিগ্ন হন, তবে একটি ভাষা থেরাপিস্ট বা পেডিয়াট্রিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা শিশুর ভাষা বিকাশের সঠিক কারণ সনাক্ত করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় থেরাপি বা পরামর্শ দিতে পারেন।
৭. বাবা-মার প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহ
শিশুর ভাষা বিকাশের প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক বাবা-মা উদ্বিগ্ন থাকে এবং তাদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর আলোচনা করা হলো:
শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ ও সমাধান কি?
শিশুর দেরিতে কথা বলার অনেক কারণ হতে পারে, যেমন শ্রবণ সমস্যা, পারিবারিক পরিবেশ, অথবা বিশেষজ্ঞের মতে, কিছু শিশুরা ধীরগতিতে শিখে। সমাধান হিসেবে, বাবা-মাকে শিশুদের সাথে নিয়মিত কথা বলতে হবে এবং তাদের প্রতি অধিক সময় দিতে হবে। যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুর কথা বলার দোয়া কি?
শিশুর কথা বলার জন্য কোনও নির্দিষ্ট দোয়া নেই, তবে পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে সন্তানের জন্য বরকত ও সফলতার দোয়া করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, “রব্বি হাবলী হি মিন লাদুনকা রাহমা” (অর্থাৎ, হে আমার প্রভু, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন) এই ধরনের দোয়া শিশুর জন্য উপকারী হতে পারে।
বাচ্চা বোবা হওয়ার লক্ষণ কী কী?
বোবা হওয়ার লক্ষণগুলো মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে: ১২ মাসের মধ্যে একক শব্দ না বলা, ১৮ মাসে কোনও প্রতিক্রিয়া না জানানো, ২৪ মাসে ২ শব্দের বাক্য না বলা, এবং ৩৬ মাসে বাক্য গঠন করতে না পারা। যদি এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাচ্চাদের কথা বলা শেখানোর উপায় কী?
বাচ্চাদের কথা বলা শেখানোর জন্য তাদের সাথে নিয়মিত কথা বলা, গল্প শোনা, গান গাওয়া এবং ছবি বা পোস্টার দেখিয়ে শব্দ শেখানো অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও, ইশারা ও শব্দ মিলিয়ে শেখানো এবং ধৈর্য সহকারে তাদের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
বাচ্চাদের কথা বলার বয়স কখন?
সাধারণত, শিশুরা ১২ মাসের মধ্যে একক শব্দ বলা শুরু করে, ১৮ মাসে ২-৩ শব্দের বাক্য তৈরি করে এবং ৩৬ মাসের মধ্যে সাধারণ কথোপকথনে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে প্রতিটি শিশু ভিন্ন এবং তাদের শেখার সময়সীমা আলাদা হতে পারে।
শিশুর দেরিতে কথা বলা কি অটিজমের লক্ষণ?
শিশুর দেরিতে কথা বলা কখনো কখনো অটিজমের লক্ষণ হতে পারে, কিন্তু এটি একমাত্র লক্ষণ নয়। অটিজমের অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের সমস্যা, পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ এবং বিশেষ আগ্রহের বিষয় থাকতে পারে। যদি শিশুর মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুর দেরিতে কথা বলার বড় কারণ কী?
শিশুর দেরিতে কথা বলার বড় কারণগুলো মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে শ্রবণ সমস্যা, পারিবারিক ভাষাগত পরিবেশ, বংশগত প্রভাব, এবং শিশুদের মধ্যে শারীরিক বা মানসিক সমস্যা। বাবা-মায়ের উচিত শিশুদের ভাষা বিকাশের উপর নজর রাখা এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
বাচ্চাদের কথা না বলার কারণ কি?
শিশুরা বিভিন্ন কারণে কথা বলার মধ্যে দেরি করতে পারে, যেমন শ্রবণ সমস্যা, সামাজিক যোগাযোগের অভাব, ভাষাগত উদ্দীপনার অভাব, অথবা অন্য কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যা। শিশুদের সাথে নিয়মিত কথা বলার মাধ্যমে এবং তাদের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
শিশুদের কথা বলার সঠিক সময় কখন?
প্রতিটি শিশুর ভাষা বিকাশের সময় ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণভাবে, ১২ মাসের মধ্যে শিশুরা একক শব্দ বলা শুরু করে, ১৮ মাসে ২-৩ শব্দের বাক্য তৈরি করে, এবং ৩৬ মাসের মধ্যে তাদের কথা বলার